২২ জুন, ২০২৪ তারিখ শনিবার বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর সম্মানিত সভানেত্রী জনাব ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী এবং পুনাক, বাংলাদেশের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ময়মনসিংহ জেলা সফর করেন।
সম্মানিত পুনাক সভানেত্রী মহোদয় সকাল ১১.০০ ঘটিকায় অফিসার্স মেস, ময়মনসিংহে এসে পৌছালে ময়মনসিংহ রেঞ্জের সম্মানিত ডিআইজি জনাব মোঃ শাহ আবিদ হোসেন বিপিএম (বার),
পিপিএম মহোদয় ও জনাব সুরাইয়া সুলতানা, উপদেষ্টা, পুনাক, ময়মনসিংহ এবং ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অভিভাবক সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বিপিএম, পিপিএম মহোদয় ও জনাব ডা. রেবেকা শারমিন, সভানেত্রী, পুনাক, ময়মনসিংহ মহোদয় তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরবর্তীতে সম্মানিত পুনাক সভানেত্রী মহোদয় পুলিশ লাইন্সে অবস্থিত "চেতনায় অম্লান" এ মহান মুক্তিযুদ্ধে দায়িত্ব পালনকালে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তিনি পুলিশ লাইন্সে অবস্থিত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন আহমেদ মাল্টিপারপাস শেডে (কল্যাণ শেড) পৌছালে হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ার একি ঝাঁক শিল্পী দৃষ্টিনন্দন নৃত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে তাকে অভ্যর্থনা জানান।
কল্যাণ শেডে তিনি পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক), ময়মনসিংহের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর আয়োজনে অসহায় ও দুঃস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। ডা. রেবেকা শারমিন, সভানেত্রী, পুনাক, ময়মনসিংহ মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব নাসিম আমিন, সাধারণ সম্পাদিকা, পুনাক, বাংলাদেশ; জনাব সুরাইয়া সুলতানা, উপদেষ্টা, পুনাক, ময়মনসিংহ মহোদয়সহ পুনাক বাংলাদেশের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও পুনাক, ময়মনসিংহের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় নিহত পুলিশ পরিবারের স্ত্রী ০৫ জন, প্রতিবন্ধী ১০ জন, উপজাতি ১০ জন এবং অসহায় ও দুঃস্থ ২৫ জনসহ মোট ৫০ জনের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
এসময় সম্মানিত প্রধান অতিথি মহোদয় তার বক্তব্যে বলেন একাত্তরের প্রথম প্রতিরোধ থেকে শুরু করে আজ অবধি দেশ ও জাতির কল্যাণে বাংলাদেশ পুলিশের অগণিত কর্মকর্তা- কর্মচারী যে দেশপ্রেম ও মানবতার জয়গান অন্তরে ধারণ করে আত্মত্মত্যাগ ও আত্মনিয়োগে ব্রত হয়েছেন, তাদের সেই মানবতাবোধকে প্রজন্মান্তরে জাগ্রত করে রাখার দৃপ্ত শপথে ১৯৮৬ সালের ১ এপ্রিল ঐতিহাসিক রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স স্কুল সংলগ্ন টিনশেডের ছোট একটি কক্ষে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ পরিবার কল্যাণ সমিতি যা কালক্রমে আজকের বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) নামে জনগণের কাছে এক অপার শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর মমত্ববোধের প্রতিশব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। দেশব্যাপী বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি নানা সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদীর্ণ জনগোষ্ঠীর পাশে মমতার আচ্ছাদন নিয়ে বিভিন্ন দূর্গম জনপদে পুনাক ছুটে গিয়েছে নির্দ্বিধায়। এই ধারাবাহিকতায় পুনাক ময়মনসিংহ সমান তালে অগ্রসর হয়ে নারীবান্ধব বিভিন্ন কর্মকৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি নানা জনহিতকর কাজে আত্মনিয়োগ করে আসছে। পুলিশ লাইন্স, ময়মনসিংহে অবস্থিত পুনাক শো-রুমটি নিজস্ব উদ্যোগে সুগঠিত হয়ে একটি মানসম্মত বিক্রয়কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যেখানে পুনাকের নিজস্ব উৎপাদিত কারুপণ্যের সমারোহ ছাড়াও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পণ্য-সামগ্রী স্থান পেয়েছে। অদ্যবধি পুনাক, ময়মনসিংহের উদ্যোগে মোট ২৮৭ জন সুবিধাবঞ্চিত অসহায় নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
পরবর্তীতে সম্মানিত পুনাক সভানেত্রী মহোদয় পুলিশ লাইন্সে অবস্থিত পুনাক শো-রুম পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। তারপর তিনি পুলিশ লাইন্সে নবনির্মিত বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহ (উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষমান) পরিদর্শন করেন এবং এরকম একটি মহৎ কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আরো বলেন এই জাদুঘরটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ৭১- এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধে পুলিশের ত্যাগ ও অবদানের তাৎপর্যকে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পরিদর্শন শেষে তিনি ময়মনসিংহ রেঞ্জের সম্মানিত ডিআইজি মহোদয়ের বাসভবনে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মধ্যাহ্নভোজে শেষে জেলা সদরে অবস্থিত শশী লজ পরিদর্শন করেন। শশী লজে এসে তিনি বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘুরে ঘুরে দেখেন। শশীলজ পরিদর্শন শেষে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন পরিদর্শন করেন। এসময় সেখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মহোদয় ও প্রক্টর মহোদয় উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবনে আসেন। সেখানে নির্মিত "নির্ঝর নৈঃশব্দ্য" ফোয়ারার শুভ উদ্ভোধন করেন। এসময় সেখানে পুনাক নেতৃবৃন্দসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উদ্ভোধন শেষে সকল অতিথিবৃন্দ নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। দিনব্যাপী সকল কর্মকান্ডের সর্বাঙ্গীন সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের সকল সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।